যেখানে পাখিরা গাহে না গান

সৌম্যশঙ্কর বসু

মুল্যঃ ১২০০ টাকা

‘উনি ফিসফিস করে বললেন, ভোরবেলা যখন পৃথিবীর সবখানে পাখিরা গান গেয়ে ওঠে, মরিচঝাঁপিতে ওরা কখনও তা করে না। ওখানে না। কক্ষনও না।’
১৯৭৯ সালে মরিচঝাঁপিতে নিম্ন বর্ণের উদ্বাস্তুদের জোর করে উৎখাতের কারণে প্রাণ হারান দু-হাজারেরও বেশি মানুষ। ছিন্নমূল পরিবারের সন্তান সৌম্যশঙ্কর মরিচঝাঁপির সেই কালো ইতিহাসের পাতা উলটে উদ্ধার করে এনেছেন ওই ঘটনার উত্তরজীবীদের বয়ান এবং গণহত্যার সন্ত্রাস-দৃশ্য। ২০২০ সালে প্রকাশিত হয় ‘ হোয়ার দ্য বার্ডস নেভার সিং ’। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের রাজনীতি-সচেতন পাঠক-সমাদৃত সেই বইটিরই বাংলা তর্জমা ‘ যেখানে পাখিরা গাহে না গান’।
একাধারে আশৈশব ছিন্নমূল মানুষের স্মৃতির অভিঘাতে বড় হয়ে ওঠা সৌম্য এই দৃশ্য-আখ্যানে কথা বলেছেন মরিচঝাঁপি গণহত্যার সমষ্টিগত স্মৃতির সঙ্গে, অন্যদিকে পাশে রেখেছেন গবেষক-সাংবাদিকের নিবন্ধ এবং শাসকের বয়ান ও চিঠি। এই রাজনৈতিক শিল্প-ইস্তেহার এমন এক দৃশ্য-আখ্যান, যা দেখায় সমস্ত ক্ষমতাস্তম্ভই কোনও না কোনওভাবে ছিন্নমূল মানুষের গণহত্যার জন্য দায়ী।
এই দৃশ্য-আখ্যান গোটা পৃথিবীর উদ্বাস্তু জনপদগুলির সঙ্গে কথা বলে চলে, কেননা মরিচঝাঁপির মতো সেইসব জনপদেও ’নিস্তব্ধতা বিরাজ করে মৃতদেহের মতো’।

সৌম্যশঙ্কর বসু (জন্ম – মেদিনীপুর, ১৯৯০) একজন কলকাতার শিল্পী। তিনি আর্কাইভের নথিপত্র ও মৌখিক ইতিহাসকে পুনর্নির্মাণ করেন ফটোগ্রাফি, ফিল্ম, বিকল্প আর্কাইভ, শৈল্পিক বই ইত্যাদি মাধ্যমে। দীর্ঘকালীন গবেষণা ও স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে মেলামেশার মধ্যে দিয়ে এক হাইব্রিড পদ্ধতিতে তিনি কাজ করেন যেখানে উঠে আসে দেশভাগ পরবর্তী বাংলায় প্রান্তিক অথচ দৃঢ়চিত্ত মানুষের নানান অভিজ্ঞতা, এমনকি নিজের পারিবারিক ইতিহাসের নানা ঘটনাও। বাস্তব ও কল্পনার সংমিশ্রণে সৌম্যর কাজ স্মৃতি, আকাঙ্ক্ষা, দুর্বলতা ও আত্মপরিচয়ের নতুন নতুন দিগন্ত আমাদের সামনে তুলে ধরে।

স্বীকৃতি ও সম্মাননা-  ‘ফুল মুন অন এ ডার্ক নাইট’-এর জন্য  ম্যাগনাম ফাউন্ডেশনের সোশ্যাল জাস্টিস পুরস্কার(২০১৭), Recontres d’Arles-এ ‘এ ডিস্ক্রিট এক্সিট থ্রু ডার্কনেস’ ছবির জন্য লুই রোদেরার ডিসকভারি পাবলিক আওয়ার্ড (২০২৩), ‘হোয়ার দ্য বার্ডস নেভার সিং’ -এর জন্য PH মিউজিয়ামের বিচারে শ্রেষ্ঠ ফটোবুক (২০২০) এবং প্যারিস ফটো-এপারচার ফাউন্ডেশন ফার্স্ট ফটোবুক পুরস্কার এবং লুসি ফটোবুক প্রাইজ ২০২১-এর জন্য শর্টলিস্টেড হয় এই বই। 

তাঁর বই ও ছবি সংগ্রহ করেছে দ্য রয়্যাল অন্তরিও মিউজিয়াম, নিউ ইয়র্কের দ্য মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্ট, দ্য মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্ট এন্ড ইসারা আর্ট ফাউন্ডেশন, দিল্লির কিরান নাদার মিউজিয়াম অফ আর্ট ইত্যাদি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান। 

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, এন টি আর, গ্রানটা, বিবিসি, দ্য ক্যারাভান, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ পত্র-পত্রিকাতে সৌম্যর কাজ নিয়ে লেখালেখি হয়েছে। এছাড়াও ডেলফিনা ফাউন্ডেশন (লন্ডন) এবং প্রহেলবেতিয়া (সুইজারল্যান্ড) ইত্যাদি আর্ট রেসিডেন্সিতেও অংশগ্রহণ করেছেন সৌম্য।